একটি মেলা - বাংলা রচনা | Bengali Essay on A Fair | Bangla Paragraph Writing for Class III - VI |
একটি মেলা
মেলা মানেই লােকারণ্য, দোকানের সারি, নাগরদোলা আর সার্কাসের তাঁবু, বেলুন ওড়ানাে, বাঁশিওয়ালার বাঁশির সুরের ঐকতান। মেলা মানেই শহর-গ্রামের মানুষের মেলবন্ধন, কিশাের-কিশােরীর কৌতূহলী উৎসুক মুখ। মেলা মানেই মিলেমিশে একাকার। আমার দেখা একটি মেলা-কলকাতা থেকে খুব একটা দূরে নয়, ট্রেনে, বাসে দুভাবেই যাওয়া যায়। মেলাটি বেশ পুরােনাে, হুগলির কাছাকাছি গ্রাম ঘেঁসে এই মেলা। জন্মাষ্টমীকে কেন্দ্র করে এই মেলার শুরু, চলতে থাকে প্রায় একমাস। মেলার মূল অংশটিতে পৌরাণিক কাহিনির চিত্রায়ণ, কর্ণার্জুন সংগ্রাম, দ্রৌপদীর স্বয়ম্বর সভা, জয়দ্রথ বধ, ভীম-দুর্যোধনের গদাযুদ্ধ প্রভৃতি পুরাণ মহাভারতের কাহিনি অবলম্বন করে ছবি ও পুতুলের ছড়াছড়ি। বাসুকির বসুদেবের মাথায় ফণার ছাতা ধরে যমুনা পার, নন্দোৎসব, কংসের কারাগারে দৈববাণী, কৃষ্ণের ননীচুরি, পুতনা বধ, কালীয় দমন প্রভৃতি বিষয়গুলির উপর পুতুল নাচ। দোকানপাটে কেনাবেচার ভিড়, দর্শনীয় সারি সারি বাদাম ভাজার দোকান, তােলা উনুনের উপর বড়াে বড়াে কড়াই, বালির মধ্যে গা ডুবিয়ে গরম গরম চিনেবাদামের সুঘ্রাণের সঙ্গে মিশে যায় পাঁপড় ভাজার গন্ধ। বাদাম কিনে খােলা ছাড়িয়ে দু-এক দানা মুখে দিতে দিতে, মেলার মজা দেখার আনন্দের সাথে মিশে আছে। ছেলেবেলার দুরন্ত দিনগুলাে। দোকানদারদের সমবেত কণ্ঠের আহ্বান, বেলােয়ারি চুড়ি, যশােরের চিরুনি, বেতের বােনা ধামা-কুলাে, দা-কাটারি, হাতাবেড়ি-খুন্তি, লক্ষ্মীর পট, সত্যনারায়ণের ছবি এসবের মধ্যে দিশেহারা ক্রেতা কোনটা কিনবে ঠিক করতে পারে না। মেয়েরা গিয়ে ভিড় করে চুড়ি ও নানারকমের গয়নার দোকানে। জাদুকরের লক্ষ্যভেদের খেলা, কিশােরীর জীবন্ত সমাধি, নররাক্ষসের আস্ত মুরগি ভক্ষণ, চলতি ফিল্মের হাল্কা গান, বিদ্যুৎচালিত নাগরদোলায় ঘােরাঘুরি প্রভৃতি অজস্র দৃশ্য মেলাটিকে সমৃদ্ধ করেছে। গরিব কিশাের পয়সার অভাবে করুণ মুখে দাঁড়িয়ে আছে, যেন সমস্ত মেলার আনন্দই তার কাছে বিষণ্ণতা বয়ে নিয়ে এসেছে। মেলা তাই সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার, মিলিত কলকোলাহলের ঐকতানে মানুষের জীবননাট্যের উপস্থাপনার এক অভিনব রঙ্গমঞ্চ।