একটি দুষ্প্রাপ্য ছবি
চিত্র সৌজন্যে :সৌনক মহারাজ
এই ছবি অতি প্রাচীন । বরানগর কুঠিঘাট সংলগ্ন এলাকা থেকে তোলা বেলুড় মঠের শ্রীরামকৃষ্ণ মন্দির তৈরি চলছে ।
**ছবির সময়কাল অনুমান : খুব সম্ভবত ১৯৩০-১৯৩৮ এর মধ্যবর্তী। কারণ ১৯৩৮ সালে মূল মন্দিরটির তৈরি হয়ে গেছিল।
নীলাম্বরবাবুর বাগান বাড়ীর দ্বিতল বারান্দা থেকে গঙ্গা দর্শন এবং দূরে বরানগর শহর। এখানেই শ্রীমা সারদাদেবী থাকতেন এবং এই বারান্দা থেকেই অপরূপা গঙ্গা দর্শন করতেন।
কাঁচের মন্দির।এখানেই গঙ্গা নদীর ঠিক বিপরীতে বেলুড় মঠ দৃশ্যমান। গঙ্গার প্রবহমান স্রোতের শব্দ আর মন্দিরের এক আশ্চর্য নীরবতা এবং প্রকৃতি এখানে মিলেমিশে এক হয়ে যায়।
ভবতারিণী মায়েরা তিন বোন দুই বোন থাকেন টালাব্রিজের এপারে , মা ভবতারিণীর ছোটবোন ব্রহ্মময়ী কালি বাড়ি বা প্রামানিক কালীবাড়ি ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে তৈরি হয় এই কালীবাড়ি। এনাকেই নাকি রামকৃষ্ণদেব "মাসি "বলে ডাকতেন তবে মা এখানে তালাবন্দি।
ভবতারিণী মা মেজ বোন এরা এই সম্পর্কে বোন যে,এই মূর্তি গুলির কারিগর ছিলেন কাটোয়ার দাই হাটের নবীন ভাস্কর। বর্ধমানের মহারাজা তাকে একটি কষ্টি পাথরের পাহাড় থেকে কিছুটা পাথর উপহার দিয়েছিলেন আর সেই একটি পাথর খন্ড থেকেই এই তিন মূর্তি গুলি তৈরি করেন নবীন ভাস্কর । গর্ভগৃহ হিসেবে মানানসই মূর্তি মেজো মা ভবতারিণীকে রানী রাসমণির পছন্দ হয়ে যায় সেই থেকেই মা ভবতারিণী দক্ষিণেশ্বরে পূজিত হচ্ছেন।
প্রামানিক ঘাট রোডে প্রামানিক কালীবাড়িতে পূজিত হচ্ছেন ছোটমা ব্রহ্মময়ী।বরানগর বা বরাহনগর একটি উত্তর কলকাতার প্রাচীন জনপদ সপ্তদশ শতকে এখানে ডাচরা একটি কুঠি স্থাপন করেন। এখনও এখানে একটি পাড়ার ও ঘাটের নাম হচ্ছে কুঠিঘাট। বরাহনগর নামের উৎপত্তির অনেক মত, প্রথমতঃ অনেকে বলেন এই গঙ্গার ধারে প্রচুর শুকরের উৎপাত ছিল তাই এর নাম বরাহনগর এবং "স্টেরনসাম মাস্টারের" লেখনি রোজনামচা থেকে জানা যায় ১৬৭৬--৭৭ সালে বরানগরে ডাচদের একটা শুয়োরের মাংস জারণ বা ম্যারিনেট করার কারখানা ছিলো। এই তথ্য আমরা হরিসাধন মুখোপাধ্যায়ের "কলিকাতার সেকাল ও একাল "এর বই থেকে পাই তার জন্য নাকি এইরকম নামকরণ। আরো এক মতে বহু আগে বরাহ নামে এক সিদ্ধ মুনি বাস করতেন তিনি ছিলেন বিক্রমাদিত্যের নবরত্ন সভার বরাহমিহির জ্যোতিষ বিজ্ঞানে বিখ্যাত "ক্ষণা"র শ্বশুর মশাই,ভিন্নমতে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বঙ্গীয় শব্দকোষ এ "বরহা" বলে যে শব্দটি পাওয়া যায় তার অর্থ ময়ূরপুচ্ছ তিন চারশ বছর আগের থেকেই এই গ্রামে ময়ূর ও ময়ূর পুচ্ছ এর বাজার ছিল। অনুমান করা হয় যে পাশের অঞ্চলেরএই জন্যই বোধহয় নামকরণ হয়েছিল চিড়িয়ামোড় । তাই মনে করা হয় আদি গ্রামটির নাম ছিল বরাহনগর। ৩ অক্টোবর প্রথমেই আমাদের গন্তব্য স্থল ছিল কুটি ঘাটের গঙ্গার ধারে যেখানে আজ থেকে অন্তত 30 -- 35 থেকে 40 বছর আগে আমাদের বরানগর থানা ছিল, এখন যেটা পোড়োবাড়িতে পরিণত হয়েছে, তার পাশেই কৃপাময়ী কালিবাড়ি বা জয় মিত্র কালীবাড়ি কথিত আছে রানী রাসমণিএই স্থাপত্য দেখেই দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের স্থাপত্য অনুসরণ বা অনুকরণ করেছিলেন এখানেও দেখা যাবে নাট মন্দিরের সামনে মায়ের মন্দির মন্দিরের চারপাশে বারোটি শিবের মন্দির যদিও আজ অযত্নের ফলে চারিপাশে আগাছা ভর্তি সবচেয়ে খারাপ লাগলো মন্দিরের গা ঘেঁষে একটি নির্মীয়মান বহুতল, যেটা আমার চোখে বড্ড বেমানান।
সতীদাহ ঘাটে এখন যেটা বয়স্কদের বসার ছোট্ট একটি পার্ক , একসময় এইখানে আশেপাশের অঞ্চলের মেয়েদের সতী করা হত। রামকৃষ্ণ সংঘের প্রথম মঠ বরানগর মঠ , যেখানে সর্বপ্রথম স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর শিষ্যদের নিয়ে রামকৃষ্ণ সংঘের পথ চলা শুরু করেছিলেন এখনো পর্যন্ত রামকৃষ্ণ সংঘ সেখানে আর্তের সেবা কার্য চালিয়ে যাচ্ছে। পথমধ্যে পড়ল স্বামী বিবেকানন্দের সহপাঠীও প্রিয় বন্ধু দাশরথি সান্যাল মশাই এর বাড়ী যা কিনা স্বামিজি পদধূলি ধন্য যদিও এখন সেটা বহুতলে পরিণত। বাবা তারকভোলার মন্দির অষ্টধাতু অন্নপূর্ণা মন্দির এখানে নাকি মা অন্নপূর্ণা শাঁখারি র থেকে শাঁখা পরে এসে সেবায়েতের কাছে শাঁখার দাম নিতে শাঁখারিকে পাঠান এবং সেবাইত মন্দিরে গিয়ে দেখেন বন্ধ মন্দিরে মায়ের হাতে একজোড়া নতুন শাঁখা। বরানগর বাজারের কালী বাড়ির মা যেখান থেকে কিনা রামকৃষ্ণদেব যখন কাশীপুর উদ্যানবাটী যেতেন মাকে প্রণাম করে তবেই যেতেন।
ঠাকুরের ছবি এবং বরানগরের ভক্ত - এক অজানা কাহিনী
বেলুড় -এ একদিন স্বামী অখণ্ডানন্দ মহারাজ কথাচ্ছলে আমাদের বলেছিলেন - " ঠাকুরের যে ছবি পূজা হয় , তার সম্বন্ধে কিছু জানিস ? " আমরা বিশেষ কিছু জানি না বলাতে তিনি বলেন : " বরানগরের ভক্ত ভবনাথ ( স্বামীজীর বন্ধু )ঠাকুরের ফটো তুলতে চায় । একদিন অনেক অনুরোধ করে । পরদিন বরানগর থেকেই এক ফটোগ্রাফার সঙ্গে নিয়ে এসেছে বিকেলের দিকে । ঠাকুরকে প্রথমে রাজি করাতে পারেনি । ঠাকুর রাধাকান্তের মন্দিরের দিকে চলে গেলেন ।
ইত্যবসরে স্বামীজী এসে পড়েছেন । সব শুনে বললেন , " দাঁড়া , আমি সব ঠিক করছি ।" এই বলে রাধাকান্তের মন্দিরের উত্তরদিকে রকের ওপর যেখানে ঠাকুর বসেছিলেন , সেখানে গেলেন ও তাঁর সঙ্গে ভগবৎ-প্রসঙ্গ আরম্ভ করলেন । ঠাকুর সমাধিস্থ হয়ে গেলেন । স্বামীজী উঠে গিয়ে তাদের ডেকে নিয়ে এসে বললেন , " তাড়াতাড়ি ক্যামেরা ফিট কর । "
সমাধিতে ঠাকুরের শরীর একটু হেলে গিয়েছিল । ক্যামেরাম্যান ঠাকুরের চিবুক ধরে সোজা করে দিতে গেছে , চিবুক ধরা মাত্র ঠাকুরের শরীর হালকা কাগজের মতো হাতের সঙ্গে উঠে পড়েছে । তখন স্বামীজী বললেন " ওকি করছিস , শীঘ্র শীঘ্র ক্যামেরা ফিট কর । " ক্যামেরাম্যান যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি ফটো তুলে নিল । এই ঘটনা ঠাকুর কিছুই জানতেন না ।
কয়েকদিন পরে ভবনাথ যখন প্রিন্ট করা ছবি নিয়ে এল , ঠাকুর দেখে বললেন , " এ মহাযোগের লক্ষণ , এই ছবি কালে ঘরে ঘরে পূজা হবে । "
- স্বামী নির্বাণানন্দ